জাতীয় কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ

গানের বুলবুল আর কবিতায় দ্রোহের প্রতীক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। ১৮৯৯ ইংরেজি ও ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের এই বিরল প্রতিভা। কে জানতো ঝাঁকড়া চুলের সেই দুখু মিয়া হয়ে উঠবে বাংলার বিদ্রোহী কবি?

শনিবার (২৫ মে) থেকে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিনদিনব্যাপী জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে প্রেম, দ্রোহ আর মানবতার কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী উদযাপন শুরু হয়। সাহিত্যের সব শাখায় তার বিচরণ থাকলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন।

এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, কবি নজরুলের লেখনীতে ফুটে ওঠে আর্ত-পীড়িত, ব্যথিত ও উপেক্ষিত মানব মনের কথা। কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে মানুষকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উচ্চকণ্ঠ হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। তার কাছে ধর্ম, গোত্র, জাত-কুল, ধনী গরিব সব শ্রেণির মানুষ ছিল সমান। তার গানে প্রেম ও প্রকৃতি অপরূপ রূপে ধরা দিয়েছে। তাই কবি নজরুল একাধারে দ্রোহ ও মানবতার কবি। সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতার কবি। সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, প্রেম ও হৃদয়াবেগের কবি।

২৫ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আজ বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুএয়োজইছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খানের নেতৃত্বে সকাল সাড়ে ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

এছাড়াও ময়মনসিংহ, জাতীয় কবির স্মৃতি বিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষ্যে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

নজরুলকে কেউ বলেন প্রেমের কবি, কেউ বলেন দ্রোহ আর বিদ্রোহের। কারো কাছে মানবতার কবি নজরুল, গান গেয়েছেন সাম্যের। প্রাণের কবি, গানের কবি-এমন নানা নামে ডাকে সাধারণ। গবেষকরা বলছেন, নির্দিষ্ট কোন গণ্ডি নয়, নজরুলের বিস্তৃতি সর্ব পরিসরে।

১৯২২ সালে প্রকাশ করেন ধূমকেতু পত্রিকা। ‌’আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতার জন্য নজরুলকে দেয়া হয় এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। মাত্র ২২ বছর ব্যাপ্তির লেখক জীবনে রচনা প্রায় ৪ হাজার গান, অসংখ্য কবিতা, ছোটগল্প আর উপন্যাস। সাহিত্যের পাশাপাশি করেছেন সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালন, এমন কী অভিনয়ও। বর্ণাঢ্য জীবনে জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়। অংশ নেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধেও।

স্বাধীনতার পরের বছর কবি নজরুলকে সপরিবারে নিয়ে আসা হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। দেয়া হয় জাতীয় কবির সম্মান। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এদেশেই ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন প্রিয় কবি। কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়



মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *