ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪ জনের বাড়ি সাতক্ষীরায় শোকের মাতম
ফরিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত চারজন সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও কালিগঞ্জের তিন ভাটা শ্রমিক ও এক বাস হেলপারের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
ঋণের দায়ে ও পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরানোর আশায় শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগরের সোরা, ঈশ্বরীপুরের শ্রীফলকাটি ও আবাদচন্ডিপুরসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকার কালামপুর এলাকার একটি ইট ভাটায় কাজ করতে যাচ্ছিলেন তারা।
পথিমধ্যে ফরিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন তারা।
নিহতরা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের সোরা গ্রামের মৃত ছাকাত গাজীর ছেলে ভাটা শ্রমিক আবু বক্কার গাজী (৬৫), ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের শ্রীফলকাটি গ্রামের ভাটা শ্রমিক মিজানুর রহমান ওরফে বাবু (৩৫), বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের আবাদচন্ডিপুর গ্রামের বাসের হেল্পার মহাসিন মোড়ল (৩২), পার্শ্ববর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার বাজার গ্রাম রহিমপুর এলাকার মনিরুল কারিগরের ছেলে বাসের হেলপার নাহিদ কারিগর ও অন্য বাসের ড্রাইভার মাগুরা এলাকার পিকুল মোল্লা।
তারা প্রত্যেকেই ছিলেন আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হঠাৎ করে পরিবারের কাণ্ডারীকে হারানোর খবরে ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহতদের পরিবারগুলো।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগরের সোরা, শ্রীফলকাটি ও আবাদচন্ডিপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রিয়জনদের লাশের অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহত পাঁচজনের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
স্বজন হারানোর বেদনায় মূর্ছা যাচ্ছেন কেউ কেউ।
নিহতদের মধ্যে একজন আবু বক্কর গাজী। তার বাড়ির রমজাননগর ইউনিয়নের সোরা গ্রামে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আবু বক্কর ঋণের বোঝা মাথায় চেপে ১২ বছরের ছেলে ইয়াসিন আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাড়ি থেকে বের হন। পথে এ ঘটনায় ঘটে।
নিহত আবু বক্কর গাজীর স্ত্রী সুফিয়া বেগম জানান, তাদের এক ছেলে এক মেয়ের সংসার। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে থাকেন। ছেলে শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে কাজকাম করতে পারে না। তাদের ভেটখালী বাজারে একটা চাউলের দোকান ছিল। যেটা মহাজনদের কাছ থেকে সুদের টাকা নিয়ে শুরু করা। সুদের টাকা দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করতে হয়। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়ে ছোট ছেলে সঙ্গে নিয়ে ইটভাটায় কাজের উদ্দেশ্যে যেতে বাধ্য হন তার স্বামী। সকালে শোনেন তার স্বামী আর নেই।
শ্রীফলকাটি গ্রামে স্ত্রী ও ছোট ছোট দুই মেয়েকে রেখে মারা গেছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মিজানুর রহমান ওরফে বাবু। তিনিও একইভাবে ঋণের চাপে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ইটভাটায় যাচ্ছিলেন। এঘটনায় তার ছোট মেয়েও মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
নিহত বাবুর বাড়িতে গেলে তার মা রাবেয়া খাতুন জানান, ছেলেটা ঋণের চাপে বাড়িতে থাকতে পারে না। বউ মেয়েদের বাড়িতে রেখে সব সময় বাড়ির বাইরে পালিয়ে থাকতো। এবার বাধ্য হয়েই স্ত্রীর সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে ভাটায় যাচ্ছিলো কাজের জন্য। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। ওর বাবাও মারা গেছে তিন বছর হলো। এখন তার ঋণ কে শোধ করবে?
বাসের হেলপার মহাসিন মোড়ল (৩২) সোমবার সকাল ৭টায় বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এরপর রাত ৯টায় স্ত্রী আরজা খাতুনের সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। এ সময় স্ত্রীকে তিনি জানান ভেটখালী থেকে ইট ভাটার শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকার কালামপুর যাচ্ছেন তিনি। সকালে খবর পান তার স্বামী মারা গেছেন। নিহত মহাসিন এর বৃদ্ধ বাবা আনসার আলী জানান, তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট মহাসিন। গাড়ির হেলপারি করে। তার পরিবারের স্ত্রী ও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ফরিদপুর সদরের মল্লিকপুরে করিমপুর জোড়া সেতুর কাছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঝিনাইদহগামী গ্রিন এক্সপ্রেস নামের একটি বাসের সঙ্গে সাতক্ষীরা থেকে আমতলীগামী আরেকটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে পাঁচজন নিহত হন। এর মধ্যে চারজনের বাড়ি সাতক্ষীরায়। আজ রাতেই তাদের মরদেহ নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।