মে মাসে ৬০ ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’র ৪৯টিতেই বিএনপির সংশ্লিষ্টতা: এইচআরএসএস

গত মে মাসে সারাদেশে ৬০টি ‘রাজনৈতিক সহিংসতার’ ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৮১ জন। এসব সহিংসতার ঘটনার ৪৯টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে এবং বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এর মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলের ঘটনা ২৮টি, যাতে আহত হয়েছেন ২৫৯ জন ও নিহত হন ৫ জন। আজ সোমবার (২ জুন) প্রকাশিত মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মে মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদন বলছে, মে মাসে কমপক্ষে ৬০ টি “রাজনৈতিক সহিংসতার” ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৮১ জন। আধিপত্য বিস্তার, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল কেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মে মাসে সহিংসতার ৬০ টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ২৮টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫৯ জন ও নিহত ৫ জন, ১২টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ২১ জন ও নিহত ২ জন, ৬টি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৬০ জন, ১টি আওয়ামী লীগ-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে জামায়াতের ১ কর্মী নিহত, এনসিপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষের ৪টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ৪ জন, এনসিপি-জাতীয় পার্টির মধ্যে সংঘর্ষের ২টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ১২ জন, আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলে ২টি ঘটনায় আহত হয়েছেন ১১ জন, এবং ২টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। নিহত ৯ জনের মধ্যে বিএনপির ৫ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন, ও জামায়াতের ১ জন। ৬০ টি সহিংসতার ঘটনার ৪৯ টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে। গত এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে বিএনপির সাথে জামায়াতের ও ছাত্রদলের সাথে শিবিরের উত্তেজনা ও সংঘর্ষ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগ ও এনসিপির সংঘর্ষ কমেছে।

এতে আরও বলা হয়, এ মাসে এনসিপির সাথে জাতীয় পার্টির উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় ঘোষণার পর বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সাথে শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এসকল হামলায় আওয়ামী লীগের ১ জন, বিএনপির ৪ জনসহ অন্তত ৬ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় শতাধিক বাড়ি-ঘর, যানবাহন, ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সেইসাথে বিএনপির নিজেদের কর্মীদের দ্বারা অন্তত ৩ টি, জামায়াতের ১টি ও জাতীয় পাটির ১ টি রাজনৈতিক কার্যালয় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ মে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বছর আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

সাংবাদিকদের ওপর হামলার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে সাংবাদিকদের উপর হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ মাসে অন্তত ৩১ টি ঘটনায় কমপক্ষে ৯১ জন সাংবাদিক নির্যাতন, গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ সকল ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ৩৩ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৭ জন ও গ্রেফতার হয়েছেন ৩ জন। এছাড়াও ৭ টি মামলায় ৪৮ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এ মাসে সাইবার নিরাপত্তা আইন এর অধীনে দায়ের করা ১ টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১ জন ।

গণপিটুনিতে ১০ নিহতের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, এ মাসে গণপিটুনির অন্তত ২৬ টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন। বিভিন্ন আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদন আরও বলছে, মে মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ১০ টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী ( বিএসএফ ) কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন বাংলাদেশি নিহত ও ৫ আহত হয়েছেন, এবং গ্রেফতার করা হয়েছে ৯ জনকে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কমপক্ষে ১১৪৭ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ মাসে ১৬ টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪৪ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ৭ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। এছাড়া ১জন গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়েছেন।

নারী ও শিশু নির্যাতনের সংখ্যা জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে কমপক্ষে ১৩৬ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ১৪ জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩ জনকে। ৩৩ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ২২ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ জন এবং আহত হয়েছেন ২জন নারী । পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২৯ জন, আহত হয়েছেন ৮ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৫ জন নারী। অন্যদিকে, এটি উদ্বেগজনক যে, ৮৫ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৬৬ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।



মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *