ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬

সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া)আসনে বিএনপির ৩ জন জামায়াতের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা -১ তালা -কলারোয়া আসনে জামায়াতে ইসলামীর একজন ও বিএনপির ৩ জন প্রার্থী নাম এসেছে।তারা হলেন জামায়াতের নিবার্হী কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক মেয়র আক্তারুল ইসলাম ও দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক ছাত্রদল নেতা সাংবাদিক সাইদুর রহমান।

আসন্ন জাতীয় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে । ইতিমধ্যে কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন । যার ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা-১ (তালা -কলারোয়া) আসনে শুরু হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা । আর সাধারণ মানুষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ঝড় উঠেছে । কোন কোন দল থেকে কে কে প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। সেই সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও এলাকায় চালিয়ে যাচ্ছেন গণসংযোগ। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরার তালা- কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। এ আসনে দুটি উপজেলায় ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা সাড়ে চার লক্ষাধিক । ৫ই আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিএনপি কিংবা জামায়াত নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হলেও আত্মগোপনে থাকা আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির পদধারী নেতারা নীরব রয়েছেন ।

রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা যেন বাকরুদ্ধ। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টিও নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে তাদের নেতা কর্মীদের তেমন একটা সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। সেই সাথে অন্তরালে রয়েছে ১৪ দলের অন্যান্য শরিকরাও। বর্তমানে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জোরে সোরে। এর মধ্যে জামায়াতের নির্বাচনী প্রচারণা ও কর্মকান্ডে সাবলীল সর্বজনীন ও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। তাই অতি দ্রুত জনসাধারণের মাঝে তারা জায়গা করে নিতে পেরেছে। আর বিএনপি তাদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও ভয়ভীতি আচার আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে । এমনকি জামায়াতের প্রতি সাধারণের ধারণা ইতিবাচক। তালা -কলারোয়ার মানুষ অন্যান্য দল গুলোকে ভোট দিয়েছে এবার তারা জামায়াতে ইসলামীকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। তাই মাঠে ঘাটে চায়ের দোকানে জামায়াতের গুনগানে পঞ্চমুখ।

জানা গেছে, (তালা-কলারোয়া) উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে আওয়ামীলীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দীদার বখত, ১৯৯১ সালে জামায়াতের আনসার আলী, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বি এম নজরুল ইসলাম, ২০০১ সালে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগের শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নৌকা নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনের একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে। আলোচনা আছে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও দেখা যেতে পারে একাধিক ব্যক্তিকে।

দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জনগণকে সংগঠিত করতে শুরু করেছেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব। একই ভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি জোরদার করে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ আসনে দলটির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশায় কাজ শুরু করেছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র গাজী আক্তারুল ইসলাম। একই ভাবে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচক বিষয়ক সম্পাদক, দৈনিক দিনকালের সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমান। সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে, তালা-কলারোয়ার মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় ৭০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তালা-কলারোয়ার মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, তা ভোলার নয়, তাদের পাশে থেকেই আজীবন সেবা করতে চাই। দল আমাকে আগেও জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আগামীতেও জনগণকে সেবা করার সুযোগ পাব বলে আমি মনে করি ।

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ীএকক প্রার্থী হিসেবে
সাতক্ষীরা-১তালা- কলারোয়া আসনে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আমরা বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়েও সাতক্ষীরার মানুষের ও মাটির সঙ্গে মিশে ছিলাম। সে অনুযায়ী আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি এবং আমরা তালা -কলারোয়ার মানুষের কাছ থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাতক্ষীরা-১ তালা -কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ বলেন, এখানকার মাটিতে আমি জন্মেছি । আমি কাজ করতে চাই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে । বৈষম্যহীন, নির্ভেজাল, স্বচ্ছ, সুন্দর ও দূর্নীতি মুক্ত সমাজ উপহার দিতে চাই। বিনিময়ে চাই তালা -কলারোয়া উপজেলার মানুষের প্রাণখোলা দোয়া ও ভালোবাসা। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে শত কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেও আমি জনগণের পাশে ছিলাম এবং থাকবো ইনশাআল্লাহ।

সরেজমিনে সাতক্ষীরা -১ আসনে তালা -কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের মাঝে জামায়াতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এবার দাড়িপাল্লায় ভোট দেবে। কলারোয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিন্দু নেতা বলেন, আমরা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারি তবে আমাদের ভোটটি জামায়াতের দাড়িপাল্লায় পড়বে। কারণ ৫ আগষ্ট এর পর একমাত্র জামায়াতের লোকজন আমাদের পাশে ছিল। আমরা মনে করি জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের লোকজন নিরাপদ থাকবে। কোনো দলের সম্পৃক্ত নয় এমন কিছু লোকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা এবার দাড়িপাল্লায় ভোট দেবে। বিশিষ্টজনের ধারণা সাতক্ষীরার তালা -কলারোয়ায় জামায়াতে ইসলামীর দাড়িপাল্লা ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবে।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র গাজী আকতারুল ইসলাম বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে আমাকে একাধিক বার কারাবরণ করতে হয়েছে। তারপরও মানুষ আমাকে কলারোয়া পৌরসভার ভালোবেসে দুই বার মেয়র নির্বাচিত করেছে। দল চাইলে বিএনপির মনোনয়ন নিয়েই আগামীতে সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী হবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচক বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, আমি বিগত ৬/৭ বছর ধরে সাতক্ষীরায় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমে জড়িত। জেলার তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। দল যদি মনে করে তরুণ নেতৃত্ব এগিয়ে আসুক, তাহলেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেব।আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাতক্ষীরা জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান বুলু বলেন, আমাদের নতুন দল। গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগছে। আসন ভিত্তিক প্রার্থী নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।



মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *