ফিচার

অপরুপ সৌন্দর্যের সুন্দরবন

অপরুপ প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলাদেশ। উত্তরে হিমালয়,পূর্বে নাফনদী এবং সর্ব দক্ষীনে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা। বঙ্গোপসাগরের কুলঘেঁষে গড়েউঠেছে পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রভবন সুন্দরবন। জীব বৈচিত্র্যময় প্রাণীর আবাস স্থল এই বন। এখানের বৈচিত্র্যময় বৃক্ষমালার বৈচিত্র্যময় রুপ পর্যটকদের হৃদয় হরন করে নেয়। লোনা জলরাশীর মধ্যে এই বন গড়ে উঠেছে মহান আল্লাহর আপন হাতের স্পর্শে। কি অপরুপ সৌন্দর্য ! দেখে হৃদয় জুড়ায়। ইউনেস্কো তার বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় সুন্দরবনকে স্থান দিয়ে ১৯৯৭ সালে একে World Heritage Site ঘোষনা করেছে। চারিদিকে বঙ্গোপসাগরের লোনা পানির ধারা আর এর মাঝে গড়ে ওঠা এই বন পৃথিবীর সবচায়তে বৈচিত্র্যময় বন। নিচে স্বচ্ছ পানি এবং উপরে নীল আকাশ এই দৃশ্যের মাঝে এ বনের রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সৌন্দর্যের জন্য মহান স্রষ্টা হরিন, কুমির, বানর,রংবেরং এর পাখি, বিভিন্ন আকৃতির বৃক্ষ এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট রয়েল বেঙ্গল টাইগার এই বনের মাঝে স্থান দিয়েছেন। এই বনের প্রাণীদের জীবনাচরন ও অপরুপ সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

হরিন বাঘের হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সর্বদা শতর্ক থাকে। এরা সব সময় দলবেধে থাকে। ঝোপের মধ্যে কোন শব্দ হলে এরা আত্মরক্ষার জন্য প্রাণভয়ে ছুটতে থাকে। বাঘের পায়ের তালু এত নরম যে শুকনো পাতার উপর দিয়ে এরা কোন প্রকার শব্দ ছাড়ায় হেটে যেতে পারে। এ কারনে শিকার বাঘের উপস্থিতি সম্পর্কে জানার পূর্বেয় চুপিচুপি সে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং তাকে টেনেহিচড়ে নির্জন কোন ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে তার দিল-কলিজা ছিড়ে চিবিয়ে খায়। বাঘের গায়ে এত শক্তি যে, এরা একটি বড় মহিষকে পাথর বা ঝোপ-ঝাড়ের মধ্য দিয়ে কয়েক কিলোমিটার টেনে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি এরা একজন মানুষের মাথা ডিমের খোলার মত ভেঙে ফেলতে পারে। বাঘ নিশাচর প্রাণী হওয়ার কারনে সারারাত ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হেটে শিকার খুঁজে বেড়ায়। রাতে শিকার না পেলে লোকালয়ে গিয়ে গৃহপালিত পশু ধরে নিয়ে আসে। এমনকি মানুষও এদের হিংস্রতা থেকে রক্ষা পায়না। এরা সত্যিই ভয়ানক।

ঝিম সবুজের সুন্দরবনের সৌন্দর্যকে বিকশিত করেছে এখানকার সুন্দরী, গড়ান, গেওয়া, গোলপাতা সহ বিভিন্ন প্রকার মহামূল্যবান বিরল প্রজাতির বৃক্ষ। সুন্দরবন সম্পর্কে নাজানা অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে এর বিভিন্ন বৈচিত্র্য নিয়ে। এমন এক বৈচিত্র্যময় বৃক্ষ গোলপাতা। অনেকেয় হয়তো ভাবছেন এর পাতা নিশ্চয় গোল? তা’না হলে এর নাম গোলপাতা হবে কেন? অথচ নাম গোলপাতা হলেও এর পাতা কিন্তু গোল নয়। এর পাতা আমাদের সকলের পরিচিত ফলজ বৃক্ষ নারকেল পাতার মত। পল্লী অঞ্চলের স্বল্প আয়ের লোকেরা তাদের ঘরের ছাউনি ও বেড়া নির্মানের জন্য গোলপাতা ব্যবহার করে। এ জন্য এর রয়েছে প্রচুর চাহিদা। বনের উপক’লিয় অঞ্চলের মানুষেরা তাদের জীবিকার জন্য খুব কষ্ট করে গোলপাতা, সুন্দরী, গড়ান, মাছ ও মধু সংগ্রহ করে বিক্রয় করে। এদরকে বলা হয় বাওয়ালী। এদের জীবনও বৈচিত্র্যময়। নিঝুম অরণ্যের মাঝে সুখের সন্ধানে এরা যেন ভয়হীন প্রাণ। গভীর বনের মাঝে হারিয়ে গেলে যেন লোকালয়ে ফেরার জন্য এদের কোন পথ নেই। তবুও থেমে নেই পথচলা।

সুন্দরবন আমাদের অহংকার, এর রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। অপরুপ সুনীল আকাশ আর নীল জলরাশী সুন্দরবনকে করেছে নয়নাভীরাম। যেন মহান রবের নিজ হাতে গড়া তাঁর অপরুপ সৌন্দর্যের সামান্য ঠিকানা।



মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *