কৃষিকে যান্ত্রিক করণ গরু দিয়ে হাল চাষ বিলুপ্তির পথে

এক সময় গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ছিল গরু দিয়ে হাল চাষ। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন বিলুপ্তির পথে এই পদ্ধতি।এই হালচাষের পরিবর্তে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে অল্প সময়ে জমি চাষ করা হয়। অথচ দুই যুগ আগেও নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হালচাষ করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করত গ্রামের দরিদ্র মানুষ।

প্রতিদিন কাক ডাকা ভোরে কৃষকরা গরু, মহিষ, লাঙল, জোয়াল নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়তেন। আর গানে গানে মুখরিত হতো গ্রাম বাংলার মাঠ। এ দৃশ্য এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। জমি চাষের প্রয়োজন হলে অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলার চলে আসছে। এতে শ্রম ও সময় দুইটাই বেঁচে যাচ্ছে কৃষকদের। ফলে গরু দিয়ে হাল চাষ ছেড়ে ঝুঁকে পড়েছে ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলারের দিকে।

কলারোয়া উপজেলার গ্রামগুলো থেকে প্রায় বিলুপ্তি হতে চলেছে এই পদ্ধতি । গরু দিয়ে জমি চাষ ঐতিহ্যবাহী ও একটি সনাতনি পদ্ধতি হলেও এর অনেক উপকারীতা ছিল। লাঙলের ফলা জমির অনেক গভীর অংশ পর্যন্ত আলগা করতো । গরুর পায়ের ক্ষুরে জমিতে কাদা হতো অনেক । গরুর গোবর পড়ে জমির উর্বরতা শক্তি অনেক বৃদ্ধি পেতো।

উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের শাকদাহ গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে ,পেশা হিসেবে নেওয়া আবদার মোড়ল (৫০) নামের একজন কৃষক জমিতে গরু দিয়ে হালচাষ করছেন। সাথে ছিল তার ছেলে আবু সাঈদ (২৫)। তারা জানান, ছোটবেলা থেকে হাল চাষের কাজ করে আসছি। হালচাষের জন্য দরকার এক জোড়া গরু, কাঠ আর লোহার সমন্বয়ে তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, মুখোল ও লাগাম ইত্যাদি। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হয়। ফসল ভালো হয় এবং জমির উর্বরতা শক্তি অনেক গুনে বৃদ্ধি পায়।

দেয়াড়া ইউনিয়নের সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, অনেকের জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে লাঙ্গল জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। হালচাষ করার সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়ত। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো। এ জন্য জমিতে ফসলও ভালো হতো। কয়েক বছর হলো আমরা ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ করছি। এতে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি দিন দিন কমে যাচ্ছে।

শাকদাহ গ্রামের শিক্ষক মাহমুদুল হক জানান, কৃষিকাজে লাঙ্গলের ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব এবং গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যও বটে। কষ্ট হলেও গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভালো লাগত। লাঙ্গল দিয়ে চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। বেঁচে যেত গ্রামের অনেক দরিদ্র কৃষকের প্রাণ।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এস এম ইনামুল হক বলেন, কৃষিতে শ্রমিকের ঘাটতি নিরসনে এবং দেশের কৃষি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করার জন্যই কৃষিকে যান্ত্রিকী করণ করা হয়েছে। এক সময় গরু ও লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ করা হতো । এখন প্রায় অধিকাংশ কার্যক্রম যন্ত্রের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে । কৃষকদের জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ধান প্যাকেটজাত কারণে সকল কাজই অত্যাধুনিক কৃষিযন্ত্রের মাধ্যমে সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছে। এতে শ্রম ও সময় দুটোই কম লাগে।



মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *