হত্যা মামলার আসামি হয়েও পাসপোর্টের ভিআইপি সেবা নিলেন সাবেক স্পিকার!
হত্যা মামলার আসামি হয়ে রয়েছেন আত্মগোপনে শিরিন শারমিন। তবুও ভিআইপি প্রটোকলে সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং তার স্বামীর পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করেছে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে। বাসায় গিয়ে তাদের ছবি ও বায়োমেট্রিক গ্রহণ করেছে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা।
গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা সসালোচনা। সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী হত্যা মামলার আসামী হয়েও কিভাবে ঘরে বসে পাসপোর্ট সেবা পেলেন এবং কার নির্দেশে এই ভিআইপি সুবিধা দেওয়া হলো তা নিয়ে চলছে সমালোচনা। জানা গেছে, লাল পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন শিরিন শারমিন চৌধুরী।
সাধারণত বিকেল ৪টার পর পরই আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে সব ধরনের সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে এই সময়েও পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রহীতার ভিড় কমে না। সেবাগ্রহীতাদের অনেকে এই সময়ে পাসপোর্ট অফিস সংশ্লিষ্টদের দ্বারা দুর্ব্যবহারের শিকারও হন তারা।
অথচ কাউকে কাউকে নির্ধারিত সময়ের পরেও বাসায় গিয়ে দেওয়া হয় ভিআইপি সার্ভিস। তাও আবার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর মত কাউকে। যিনি কি না হত্যা মামলার আসামি। গণমাধ্যমের অনুসন্ধান বলছে, গত ৮ অক্টোবর বাসায় গিয়ে শিরিন শারমিন চৌধুরী এবং তার স্বামী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেনের পাসপোর্টের জন্য ছবি, চোখের আইরিশ এবং ১০ আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ করে পাসপোর্ট অফিসের মোবাইল টিম।
সার্ভারের তথ্য বলছে, অফিস সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে তাদের আবেদন গ্রহণ করা হয়। আবেদনের দু’দিন পরেই অর্থাৎ ১০ অক্টোবর পাসপোর্ট দু’টি জরুরিভাবে ইস্যু করার কথা।
একজন হত্যা মামলার আসামি কীভাবে এত ভিআইপি পাসপোর্ট সেবা পেলো? এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিচালকের দ্বারস্থ হয় গণমাধ্যম। বিষয়টি নিয়ে উপপরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মোবাইল টিমের যে অথরিটি তারা জানতো বিষয়টা। তারা বায়োমেট্রিক্স নেয়ার পর ফর্মগুলো আমাদের অফিসে দেয়। তখন এখান থেকে এগুলো স্ক্যান করা হয়। এটা স্বাভাবিক আবেদনের মতো দেখছি না।
যৌক্তিক কোনো জবাব নেই। তবে তিনি সার্ভার ঘেটে দেখাচ্ছেন শিরিন শারমিন চৌধুরীর পাসপোর্টের আবেদনে আবু জাফর মো. আব্দুল্লাহ নামের আরেক কর্মকর্তার স্বাক্ষর। পাসপোর্ট অফিসের সূত্র বলছে, আবু জাফর মো. আব্দুল্লাহকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে তাকে দ্রুত ঢাকার বাইরে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।
ইসমাইল হোসেন আরও বলেন, ‘এই বিষয়টা আপনাদের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আমাদের কাছেও। এই তথ্য জানার অধিকার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের আছে। এই ইস্যুর জন্য আমাদের অফিস নির্দিষ্ট অফিসার অ্যাসাইন করেছেন।’ এই উপপরিচালক বলেন, ‘মোবাইল টিম কার অনুমতি নিয়ে শিরিন শারমিন চৌধুরীর বাসায় গিয়ে তাকে ভিআইপি প্রটোকল দিয়েছেন সেটি তিনি জানেন না।’ দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কর্মকর্তারাও তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমের কাছে কোনো বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পর সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দায়িত্ব নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরে শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের (এমপি) লাল পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।