শ্যামনগরের রিডা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভুল চিকিৎসার শিকার শিশু সাব্বির
সাতক্ষীরার শ্যামনগর শহরে অবস্থিত অবৈধ রিডা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভূল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন ১০ বছরের শিশু সাব্বির হোসেন। বর্তমানে শিশু সাব্বির হোসেন সাতক্ষীরা শহরের সংগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
সাব্বির হোসেন শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পানখালি চুনা গ্রামের শাহিনুর গাজীর ছেলে।
সাতক্ষীরা শহরের সংগ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু সাব্বিরের মা আঞ্জুয়ারা পারভীন বলেন, আমার ছেলের হঠাৎ পেটে ব্যাথা ও বমি শুরু হলে গত ২৬ অক্টোবর সকালে আমি তাকে প্রথমে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানের কর্তব্যরত ডাক্তার বিপর্ণা বালা কিছু টেস্ট দিলেন এবং বললেন রিডা হাসপাতলে যেয়ে টেস্ট করেন। আমরা তখন রিডা হাসপাতালে যেয়ে টেস্ট করায়। তখন রিডা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বললেন এপেন্ডিক্স হয়েছে। এখনই অপারেশন করানো লাগবে। এরপর রিপোর্ট নিয়ে আবার শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বললেন আমার ছেলের এপেন্ডিক্স হয়েছে। এরপর আবার রিডা হাসপাতালে আসলে ওখানে দায়িত্বরতরা বললেন এখনই ইমারজেন্সি অপারেশন করা লাগবে।
এখনই ভর্তি করেন। আমি ও আমার মা তখন বললাম ওর বাবাতো বাড়িতে নেই, দুই একদিনের ওষুধ দেওয়া যায়না?
তখন তারা বলেন, ওষুধ দেওয়া যাবেনা, এখনই অপারেশন না করালে ছেলের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। এরপর ছেলেকে সেখানে ভর্তি করালো এবং টেস্টের জন্য ২ হাজার ও অপারেশনের জন্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা নিয়ে আমার ছেলেকে অপারেশন করালো। প্রথমে আমাদের বললেন অপারেশন ডা. সুব্রত বাবু করবেন। কিন্তু পরে ছাড়পত্রে দেখলাম অপারেশন করেছেন ডা. আরাফাত হোসেন। তাই নিয়ে আমাদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাকবিতন্ডাও হয়েছিল। রিডা থেকে বাড়ি যাওয়ার ২/৩ দিন পর আমার ছেলের পেটে আবারও সেই ব্যাথা ও বমি শুরু হয়।
আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এবার তালবাহানা শুরু করেন। তরপরও আবার রিডাতে নিয়ে আসলে তারা কল্লোল স্যরারকে দেখানোর কথা বললে আমরা তাকে দেখালাম। তিনি কিছু ওষূধ লিখে দিলে আমরা বাড়ি যেয়ে ছেলেকে সেই ওষুধগুলো খাওয়ালাম।
তবে ছেলের অবস্থা আরো খারাপের দিকে গেলে আমরা তাকে সাতক্ষীরা শহরে নিয়ে এসে ডা. ইকবল মাহমুদকে দেখালাম। তিনি কিছু পরীক্ষা দিলেন। আমরা সেগুলো করলাম এবং রেটিনা থেকে ডা. তনয় কুমার পালের কাছ থেকে আল্ট্রাসনো করালাম। এরপর সেই রিপোর্ট ডা. ইকবল মাহমুদকে দেখালে তিনি বললেন আমার ছেলের পায়খানার নাড়ীতে ইনফেকশন হয়েছে। তখন আমরা তার মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহরের সংগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করি। এখানে ডা. শুভর তত্তাবধানে আমার ছেলে চিকিৎসাধীন আছে। বর্তমানে আমার ছেলে সুস্থ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রিডা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফাও ফাও আমার ছেলের এপেন্ডিকস অপারেশন করেছে। তাদের অপচিকিৎসায় আমার ছেলে প্রায় মারা যাচ্ছিল। আমার ছেলেকে আমার ছেলের শরীর কাটা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
সব্বির হোসেনের বাবা শাহিনুর গাজী বলেন, রিডা হাসপাতলের অপচিকিৎসায় আমার ছেলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করবো। আমার ছেলের মত যাতে আর কেউ ওই অবৈধ হাসপাতালে অপচিকিৎসার শিকার না হয় এজন্য কর্তৃপক্ষকে ওই হাসপাতাল বন্ধ করার দাবী জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে রিডা হাসপাতালের এমডি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পরীক্ষা নিরিক্ষা করে আমরা সঠিকভাবে সব্বিরের অপারেশন করেছি। এখানে আমাদের কোন ফল্ট নেই।’ আপনাদের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ওটাতো অন্য প্রসঙ্গ। ওটার ব্যাপারে আলোচনা না করায় ভাল’।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে অভিযোগ দিলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’