সব ধারনা ছাপিয়ে জনসমুদ্রে রূপ নিল জামায়াতের কর্মী সম্মেলন

পতিত ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলা বন্ধ করুন – মিয়া গোলাম পরওয়ার

পতিত ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলা বন্ধ করতে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

২৭ জানুয়ারী সোমবার বিকেলে পাটকেলঘাটা ফুটবল মাঠে জামায়াতে ইসলামী তালা উপজেলা শাখা কর্তৃক আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুবিধা তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে যোগ্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। যোগ্য সংসদ সদস্য পেতে এ পদ্ধতির বিকল্প নেই। এছাড়া ভোট কাটা ও কালো টাকার খেলাও বন্ধ হয় এ পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি প্রার্থী হয়না। কোন দল কত ভোট পেল,তার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে কোন দলের কত এমপি নির্বাচিত হবে।

তিনি আরও বলেন, ভারত থেকেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সচিবালয়ে আগুন, ক্যু,পাল্টা ক্যু,জুডিশিয়াল ক্যু,আনছার ক্যু সবই হচ্ছে। এর মধ্যে জামায়াতকে নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পতিত ফ্যাসিস্টদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে অন্য একটি রাজনৈতিক দল চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জামায়াত, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করে , তবে আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিদায় করা যাবে।

উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোঃ মফিদুল্লাহর সভাপতিত্বে ও উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাঃ ইজ্জতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল, নায়েবে আমীর ডাঃ শেখ মাহমুদুল হক, জেলা সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমার, সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক গাজী সুজায়েত আলী, সহকারী সেক্রেটারী অধ্যাপক ওমর ফারুক।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও শিবিরের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম, কলারোয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা কামরুজ্জামান, কেশবপুর উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মোক্তার আলী, মাওলানা কবিরুল ইসলাম,,শাহ আলম, শিবির সভাপতি আল মামুন

ফ্যাসিবাদীরা যেই ভাষায় কথা বলতো, আজকে কেউ কেউ সেই ভাষায় কথা বলছেন এমন মন্তব্য করে গোলাম পরওয়ার বলেন তাদের ভাষায় ফ্যাসিবাদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। পতিত ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলা বন্ধ করা উচিত। বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদ কখনো মেনে নিবে না। আমরা সবাই ঐকমত্যের ভিত্তিতে চলতে চাই। দেশবাসীকে এই লক্ষ্যে ৫ আগস্টের চেতনায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৮ বছরের ইতিহাস ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের একটি কালো যুগ। এ যুগে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার ছিল না, অর্থনৈতিক অধিকার ছিল না, বিচারিক আদালতে মানুষের সুবিচার ছিল না। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে আমাদের জাতিসত্ত্বাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের ইসলামী মূল্যবোধকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা এভাবেই আমাদের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এ জন্য ইতিহাসে একজন জঘন্য ঘৃন্য ফ্যাসিবাদী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক অবদান ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলের নেতারা গত ৩টা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে পারিনি। বহু লোক জীবন দিয়েছে, বহু লোক নিহত হয়েছে, মামলা হয়েছে। আমাদের দেশের তরুণ ছাত্ররা, সেই আন্দোলন তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আমাদের সন্তানরা সেই আন্দোলন জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে সফল করেছে।

বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বাংলাদেশে সংঘটিত সকল হত্যার মাস্টারমাইন্ড ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দাবী করে গোলাম পরওয়ার বলেন, জুডিশিয়াল কিলিং করে নিরপরাধ মানুষদেরকে নির্বিচারে হত্যা, দিনের ভোট রাতে দেওয়া, নিরপরাধ মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানিসহ যত মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে; সবকিছুই জালিম শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে সকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। জুলাই—আগস্টে যারা জীবন দিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন আমরা তাদের কাছে ঋণী। তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। আজকে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, যাদেরকে শহীদ করা হয়েছে তারাও সেই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। সুতরাং সকল হত্যাকান্ডের বিচার হতেই হবে। জুডিশিয়াল ক্যু করে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই জুডিশিয়াল ক্যু’র সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতেই হবে।
গত ১৫ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেননি মন্তব্য করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘১৫ বছর নতুন প্রজন্মের যারা ভোটার হয়েছে, তারাসহ আমরা সবাই তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে পারি নাই। ভোটের দিন সকালে জনগণ ভোট দিতে যাবে, তখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ লীগ বাধা দিয়েছে। বলেছে ভোট হয়ে গেছে, তোমরা বাড়ি চলে যাও। যারা শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধিতা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। যারা সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের চাকরি হয়নি।’
গোলাম পরওয়ার বলেন, তারা জনগণের অধিকার দেয়নি। সাতক্ষীরার ওপর জুলুম করেছে। ৪৮ জন জামায়াত শিবর কমীর্কে খুন করেছে। ইজ্জতের ওপর হাত দিয়েছে। সম্পদ লুন্ঠন করেছে মানুষকে তারা দাসে পরিণত করেছে। সবচেয়ে খারাপ করেছে সাতক্ষীরায়। শুধু দ্বীনের পক্ষ নেওয়ায় তার সাবেক এমপি আব্দুল খালেক মন্ডলসহ অসংখ্য নেতাকমীর্ বাড়িঘর বুলড্রোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন , বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমন একটি দেশ গড়তে চাই যেখানে মাবোনেরা ঘরে এবং বাইরে নিরাপদে থাকবে। তারা কর্মস্থল এবং রাস্তাঘাটে সুরক্ষা পাবেন. নিরাপদে থাকবেন। দক্ষতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন।
তিনি বলেন, এই যে ২৪ এর স্বাধীনতা এমনি এমনিতে আসেনি। ২০০৬ সালে ২৮অক্টোবর প্রকাশ্যে দিবালোকে লগি বৈঠা দিয়ে হত্যা করে আমার সন্তানদের ওপর খুনিরা লাফালাফি করেছে। সেইদিন বাংলাদেশপথ হারিয়েছিল। সেই পথহারা বাংলাদেশ দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর ২০২৪ সালে আবার তার পথে ফিরে এসেছে। এর মাঝে অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দকে খুন করা হয়েছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে জুলুম করে হত্যা করা হয়েছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ বলেন তালা উপজেলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ সবার বসবাস। আমরা চাদাবাজ মুক্ত, সন্ত্রাশ মুক্ত উপজেলা গড়তে সকলের সহযোগীতা চায়। তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামিম একটি সার্বজনিন দল। তার সব শ্রেণী পেশার মানুষের অধীকার নিশ্চিতে জামায়াত ইসলাম বদ্ধ পরিকর। তিনি বলেন তালার মানুষের উপর আর কাউকে জুলুম করতে দিবে না জনগণ। এর জন্য যা যা করা দরকার জামায়াতে ইসলাম তাই করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যেখানের মাল সেখানে চলে গেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে মানুষ।
সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুল বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরিয়ে গেলেও এর সুফল পায়নি মানুষ। আগামিতে মানুষ যাতে স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারে তার জন্য কাজ করছে জামায়াত।

পাটকেলঘাটার বলফিল্প এলাকা ছিল লোকে লোকারন্য, জনস্রোত, মানুষ আর মানুষ, সব ধারনা ছাপিয়ে জনস্রোত জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে । সুবিশালতা ছড়িয়ে পড়ে পাটকেলঘাটা ওভার ব্রিজ, হারুন—অর রশিদ কলেজ এলাকা। বিস্মিত, হতভম্ব, পাটকেলঘাটা বাসি, হাজার ছাড়িয়ে লাখ এবং লাখের মধ্যে কেবল সীমাবদ্ধ ছিল না জনসাগর। লক্ষ লোকের সরব, স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি প্রতিধ্বনি পাটকেলঘাটার আকাশ বাতাশকে প্রকম্পিত করছিল।

আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিগত পতিত সরকারের সময়গুলোতে যেভাবে নির্যাতিত নিষ্পেষিত এবং জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন তা নজিরবিহীন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস ফ্যাসিস্ট এর কারাগারে অন্তরীণ থেকেছেন যে কারণে দেশবাসির কাছে তিনি মজলুম নেতা হিসেবে কেউ আমাদের জন্য হুমকি হোক এটা প্রাণপন চেষ্টা চালিয়েও পাটকেলঘাটা বলফিল্ড মাঠে জামায়াত শিবিরের কর্মী সমর্থকরাই সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল আজকের জনস্রোতের । শত সহস্র মহিলারা শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অবস্থান নিয়ে কর্মী সম্মেলনে। কোন উত্তেজনাকর বা বেহিসেবী (বক্তৃতা নয়, অত্যন্ত ধীরস্থির ভাবে, হৃদয়ঙ্গম বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি শান্তির বার্তা দিয়ে গেলেন তালার সর্বস্তরের মানুষকে।


সেক্রেটারী জেনারেলে প্রতিটি শব্দ চয়ন ছিল অনন্য অসাধারণ। সাতক্ষীরার মাটি ৪৮ জামায়াত শিবিরের কর্মীর রক্তে রঞ্জিত। এই সে জমিন শহীদদের জমিন। আজকের জনস্রোতের মহা উপস্থিতিতে শহীদ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। পাটকেলঘাটার মানুষ মনে রাখবে এমন জনস্রোত। প্রতিফল ঘটবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে এমনটাই আশা করছেন সম্মেল আগতরা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০ টায় একই স্থানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তালা উপজেলা মহিলা কর্মী সমাবেশ জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। সেখানেও ছিল হাজার হাজার মহিলাদের স্বরব উপস্থিতি।



মন্তব্য করুন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *